সৃষ্টির শুরু থেকেই মানব সভ্যতা ও প্রকৃতির বন্ধন অবিচ্ছেদ্য। প্রাচীনকাল থেকেই আমরা বসবাস থেকে শুরু করে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে চলেছি; কখনো সরাসরি আবার কখনো বা তার পরিবর্তিত রূপে। প্রতিদিনের প্রয়োজনে প্রকৃতিকে ব্যবহার করে চলেছি অবিরাম। আমরা আমাদের বেঁচে থাকার সকল উপাদানই পাই প্রকৃতি থেকে। কিন্তু প্রকৃতির উপাদানের এই অবিরাম ব্যবহার কী কোনো বদল ঘটাচ্ছে আমাদের চারপাশের পরিবেশের? তাই যদি হয়, তাহলে তা কী আমাদের জন্য কোন ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে? এই বিপদ এড়াবার জন্য আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার বন্ধ করে দিতেও পারছি না, বন্ধ করে দিয়ে বাঁচার উপায় নেই। যে সম্পদ ব্যবহারে প্রকৃতির ক্ষতি নেই সেগুলো ব্যবহারের উপায় আমরা খুঁজে বের করতে পারি। এই উপায় খুঁজে বের করার কাজ সহজ নয় মোটেই। এর জন্য আমাদের প্রকৃতিকে আমরা আরও নিবিড়ভাবে দেখব, জানতে হবে প্রকৃতি ও মানুষের মিথস্ক্রিয়া।
আমরা আমাদের নিচের কাজগুলো করে প্রকৃতিকে ভালোভাবে দেখার ও বোঝার চেষ্টা করব। জেনে নেবো প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের সাতকাহন।
পর্যবেক্ষণকৃত প্রতিবেশের সঙ্গে মানুষের কার্যাবলির প্রভাব
স্থানের ছবি ও নাম | মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে | সমস্যা চিহ্নিতকরণ | সংরক্ষণে করণীয় |
|
বিভিন্ন প্রকার বায়োম সম্পর্কে অনুসন্ধান ও মডেল তৈরি
মানচিত্রে প্রদর্শিত স্থানের নাম | পৃথিবীর মানচিত্রে অবস্থান |
বায়োম নিয়ে অনুসন্ধান ১. বায়োমটি কোথায় কোথায় আছে? ২. সেখানে কোন ধরনের জলবায়ু বিদ্যমান? ৩. কী কী ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর সন্নিবেশ দেখা যায়? ৪. উক্ত বায়োমটি পৃথিবীর জন্য কী কী সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে? ৬. ৫. উক্ত বায়োমটির জলবায়ু ও অন্যান্য সমাবেশের পরিবর্তন হলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে? ৬. ৭. ৮. |
বায়োম মডেল
বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশের বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদের (বনভূমি) পরিবর্তন এবং এর ফলে সৃষ্ট ঝুঁকী অনুসন্ধান
আমরা তো দেখলাম, আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশের ওপর কতটা নির্ভরশীল, আর এই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে বনভূমি। আমাদের বাঁচতে হলে যেমন প্রকৃতিকে প্রয়োজন, তেমনি প্রকৃতির টিকে থাকার জন্য দরকার বনভূমি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীতেই বনভূমির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য আকারে কমে যাচ্ছে। এবারে আমরা জানবো, বনভূমি কোথায় কোথায় কমে যাচ্ছে কিংবা তার বর্তমান অবস্থা কী। এর জন্য প্রথমে আমাদের জানতে হবে পৃথিবীর কোথায় কোথায় বনভূমি রয়েছে এবং সেসব কী নামে পরিচিত। আমরা পরবর্তী কয়েকটি কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বনভূমি কোথায় অবস্থিত এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেসব বনভূমির কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে তা অনুসন্ধান করে বের করি।
বনভূমির নাম | মহাদেশ ও দেশের নাম |
বাংলাদেশের বনভূমি:
অনুশীলনী
প্রথমে আমরা বাংলাদেশের মানচিত্রের সাহায্যে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান বন আচ্ছাদিত এলাকার অবস্থান দেখবো এবং তারপর বাংলাদেশের একটি খালি মানচিত্রে বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করে বনভূমিগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করব। ২৪ |
ক. বাংলাদেশের বনভূমির কী কী পরিবর্তন হয়েছে?
খ. পরিবর্তনের কারণগুলো কী কী?
গ. পরিবর্তনের ফলাফল কী হতে পারে?
ঘ. প্রকৃতির টেকসই সংরক্ষণে কী কী ভূমিকা নেওয়া যেতে পারেন?
বনভূমির নাম ও অবস্থান | বর্তমানে কী কী পরিবর্তন হয়েছে | পরিবর্তনের কারণসমূহ | এসব পরিবর্তন আমাদের জীবনে কোন কোন প্রভাব ফেলতে পারে/ ফলাফল | টেকসই উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে |
|
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আমাদের করণীয়
আমরা আমাদের পূর্ববর্তী কাজের মাধ্যমে এটা বুঝতে পারলাম যে মানুষ দিন দিন প্রকৃতির একটা ছোটো অংশ হয়েও অবিরত প্রকৃতিকে ধ্বংস করে চলছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। এর ফল যে কতটা মারাত্মক তা ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়। এখন আমরা পরবর্তী কাজগুলোর মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী ও বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নিতে পারি।
দুর্যোগ অভিধান
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা পালন
আমরা জানি আমরা বাঁচার জন্য প্রকৃতির ওপর কতটা নির্ভরশীল। অনেকগুলো কাজের মাধ্যমে আরও জানলাম প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক কতটা নিবিড়। কিন্তু আমরা কেবল প্রকৃতি থেকে নিচ্ছি, কিন্তু কিছুই ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছি না। আমরা যদি প্রকৃতিকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার না করি, যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে একদিন প্রকৃতির আমাদেরকে দেওয়ার ক্ষমতা নিঃশেষ হবে যাবে। তাহলে আমরা প্রকৃতি ঠিক রেখে আমাদের
প্রয়োজন মেটানোর পরিকল্পনা করব। আর এর নাম হলো টেকসই উন্নয়ন। এই পদ্ধতির উন্নয়নের মাধ্যমেই আমরা আমাদের এই বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে পারব। তাহলে আমাদেরও উচিত আমাদের নিজস্ব পরিসরে টেকসই উন্নয়নের চর্চা করা, তাই না? এ কাজগুলো আমরা আমাদের সক্রিয় নাগরিক ক্লাব ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ক্লাবের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব। কিন্তু আমরা এখনো ছোটো, তাই আমরা আমাদের এসব কাজে এলাকার মানুষের সহযোগিতা নেবো।
চলো, তাহলে আমরা কী কী কাজ করতে পারি, তার একটি তালিকা দলে বসে চূড়ান্ত করে ফেলি। |
১. ২. ৩. 8. ৫. |
এলাকায় সম্পদের টেকসই ব্যবহারমূলক কাজ:
১. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে পচনশীল ও অপচনশীল এই দুই ধরনের বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় অনুরোধ পত্র প্রেরণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ। ২. এলাকায় পুকুর, খাল বা অন্যান্য পানির উৎস যা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তা পুনরায় ব্যবহার যোগ্য করে তোলার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় অনুরোধপত্র প্রেরণ এবং বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ। ৩. এলাকায় ও নিজের আবাসনে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে টেকসই ব্যবস্থাপনা গ্রহণ। 8. নালা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এলাকাবাসীকে সচেতন করা। ৫. সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। |
সবশেষে এটা আমাদের মনে রাখতে হবে জলবায়ুজনিত দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে অনেক বড়ো চ্যালেঞ্জ। আর এই সকল চ্যালেঞ্জ তখনই মোকাবিলা করতে পারব যখন আমরা টেকসইভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হব। আর এই কাজে আমরা সফল হব তোমাদের মতো ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মাধ্যমে, তোমরাই গড়ে তুলবে জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাত-সহিষ্ণু নিরাপদ সমৃদ্ধ বদ্বীপ।
আরও দেখুন...